আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০৫ পিএম
হিজাব পরা নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে তিন দিনের জন্য কর্ণাটক রাজ্যের স্কুল,কলেজ বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই। শান্তি ও সম্প্রীতির স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কর্ণাটকের সীমানা অতিক্রম করে হিজাব বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশেও। স্কুল-কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করতে মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিং পারমার অভিন্ন পোশাক বিধি ও শৃঙ্খলার দোহাই দিয়েছেন। হিজাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে পন্ডেচেরিতে।
স্কুল-কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করার পক্ষে সায় দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রীও। নিজের রাজ্যেও এই নিয়ম চালু করার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘হিজাব স্কুল ইউনিফর্মের অংশ নয়। তাই স্কুলে এটি পরে আসা উচিৎ না। ধর্মীয় ঐতিহ্য নিজ বাড়িতে পালন করুন, স্কুলে নয়। শৃঙ্খলার বিষয়টিকে মাথায় রেখে অভিন্ন পোশাকবিধি আনছি আমরা।’
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে কর্ণাটকের উদুপি জেলার একটি সরকারি কলেজে হিজাব পরিহিত ছাত্রীদের ক্লাস করতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে। কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এর রেশ ধরে হিজাব নিষিদ্ধের দাবিতে পথে নামে। এই বিতর্কের জেরে প্রচণ্ড বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় দক্ষিণের রাজ্যটিতে। বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্যগুলোতেও। কলেজ কর্তৃপক্ষের এ বৈষম্যমূলক নিয়মের বিরুদ্ধে কিছু ছাত্রী কর্ণাটক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এ মামলাটির শুনানি নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্কুল, কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করার পক্ষে সায় দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রীও। নিজের রাজ্যেও এই নিয়ম চালু করার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘হিজাব স্কুল ইউনিফর্মের অংশ নয়। তাই স্কুলে এটি পরে আসা উচিৎ না। ধর্মীয় ঐতিহ্য নিজ বাড়িতে পালন করুন, স্কুলে নয়। শৃঙ্খলার বিষয়টিকে মাথায় রেখে অভিন্ন পোশাকবিধি আনছি আমরা।’
কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর একজন কারিগরি প্রশিক্ষক শাহজামা ফেরদৌস বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সাধারণ জনগণ বেশ চিন্তিত। আজ উদুপিতে এই ঘটনা ঘটল। আগামীকাল অন্য কোথাও হতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, বেঙ্গালুরু সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ করার কিংবা ছাত্রদের বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত নেবে না। আমরা নিজেদের সাম্প্রদায়িক নয়, উদার মানসিকতার বলেই বিশ্বাস করি।
হিজাব বিতর্কে বিজেপির কঠোর সমালোচনা করেছে বিরোধী শিবির কংগ্রেস। কংগ্রেস মুখপাত্র আব্বাস হাফিজ বিজেপির সমালোচনা করে বলেন, শত শত বছর ধরেই ভারতে মুসলিম মহিলারা হিজাব এবং শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরা পাগড়ি পরে আসছে। এখন নতুন করে এ ধরনের বিতর্ক করার কোন সুযোগ নেই। পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধি না করে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া তরুণ প্রজন্মের মনে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে সরকার। কিছু কিছু স্কুলে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের আদলে ধর্মীয় ‘ড্রিল’এ অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও কংগ্রেসের উত্তর প্রদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াংকা গান্ধী বুধবার বলেছেন, নারীরা কী পোশাক পরবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার শুধু নারীদেরই আছে। ভারতের সংবিধান স্বয়ং নারীদের এ অধিকার নিশ্চিত করে। তিনি টুইট বার্তায় জানান,
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও টুইট করে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদ করে মুসলিম ছাত্রীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
হিজাব বিতর্ককে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে তিনি বলেন, ‘‘মেয়েদের তাদের হিজাব পরে স্কুলে যেতে দিতে অস্বীকার করা ভয়ঙ্কর। ভারতীয় নেতাদের অবশ্যই মুসলিম নারীদের প্রান্তিকীকরণ বন্ধ করতে হবে।”
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এমএসএ